শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেড়েছে কারাবন্দি, মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেড়েছে কারাবন্দি, মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

নিউজ ডেস্ক :

দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে নির্বাচনের। বলছি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে শেষ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আটঘাট বেঁধে নির্বাচনে যাওয়ার কথা ভাবলেও বিরোধীরা এখনও দোলাচলে। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখনও রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি।

সরকারবিরোধীদের অভিযোগ, সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। খোদ পুলিশের তথ্য বলছে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং পরবর্তীতে হরতাল-অবরোধের জেরে বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় সারাদেশে প্রায় ৯ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এসব অভিযোগের মামলায় তাদের পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। ফলে কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার তুলনায় বন্দির সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এই অবস্থায় কারাবন্দিদের মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে কতটুকু- এমন প্রশ্ন অনেকের।
প্রতিদিনই নানা অপরাধে আসামিদের গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে অহরহ। দেশে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে কারাগারগুলোতে আগে থেকেই বন্দির সংখ্যা ধারণক্ষমতার বেশি। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারের কারণে কারাগারগুলো এখন বন্দিতে ঠাসা। অনেকে বলছেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর থেকে সারাদেশেই বন্দির সংখ্যা আরও বাড়ছে।

কারা সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৩ হাজার হলেও ১২ নভেম্বর পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন প্রায় ৮৯ হাজার। যেখানে গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিজেই জানিয়েছিলেন কারাগারে বন্দি ৭৭ হাজারের কিছু বেশি।

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারসহ মোট ৬৮টি কারাগার চালু রয়েছে। এসব কারাগারে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দি সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৫ হাজার ৬৭৭ জন এবং নারী ৩ হাজার ৬৫জন। অথচ কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জনের। পুরুষ কারাবন্দির ধারণ ক্ষমতা ৪০ হাজার ৯৩৭ জন এবং নারী এক হাজার ৯২৯ জন।

কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দির থাকার জন্য ন্যূনতম ৩৬ বর্গফুট জায়গা থাকতে হয়। কিন্তু কারাগারে সেটা মানা সম্ভব হয় না। কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বিধিতে যা আছে তা মানা যায় না। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকায় দ্বিগুণ রাখতে হয়। এতে কারাগারে শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অনেককে গাজীপুরের কাশিমপুরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারপরও সেখানে ৯ হাজারের বেশি কারাবন্দি রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক মামলার আসামি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোরব থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে এক হাজার ৯৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী যে সংখ্যক বন্দি থাকার কথা তার চেয়ে বেশি রয়েছে। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েকদিন আগে যে চাপ ছিল তার তুলনায় বন্দির সংখ্যা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আমাদের অতিরিক্ত যে বন্দি ছিল তাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন বন্দি কমই আছে।’

কারা সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৮টি কারাগারের জন্য কারা অধিদপ্তরের চিকিৎসক পদ ১৪১টি। অথচ কারা অধিদপ্তরের অধীনে নিজস্ব মাত্র তিনজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি সব কারাগারে চিকিৎসা চলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংযুক্ত চিকিৎসকদের মাধ্যমে। এতে বন্দিদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। কারাগারগুলোতে কারাবন্দিরা থাকা, খাওয়া, ঘুম, চলাফেরাসহ নানা সমস্যায়ও পড়েন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, চুলকানি, জ্বর, কাশি, কিডনি, লিভারজনিত সমস্যাসহ নানা রোগে ভোগেন কেউ কেউ। কারাগার সংশোধনাগার না হয়ে যেন সংকটস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলছেন অনেকে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT